পাভেল নতুন সেলফোন নিয়েছে। সেলটা হাতের
তালুতে মেলে ধরে মোনাকে সে এটা বললো। মোনা পাভেলের সেলফোনটা হাতে নিলো। নিয়ে
নেড়েচেড়ে দেখলো কিছুক্ষণ। তারপর সে সেলফোনে প্রোগ্রামগুলো দেখতে লাগলো। দেখতে দেখতে
মোনা পাভেলের এসএমএস ইনবক্সে ঢুকলো। তারপর বললো:
-
তোমার
এসএমএস পড়ি? সমস্যা আছে?
-
না
সমস্যা কী। পড়ো।
মোনা প্রথম এসএমএস টা ওপেন করলো আর পড়তে
শুরু করলো:
“হাজব্যান্ড: কী, ঢুকেছে?
ওয়াইফ: অর্ধেক ঢুকেছে।
হাজব্যান্ড: বেশ টাইট মনে হচ্ছে... পুরোটা ঢুকেছে?
ওয়াইফ: হ্যাঁ ঢুকেছে।
হাজব্যান্ড: ব্যথা লাগে?
ওয়াইফ: না, লাগছেনা।
হাজব্যান্ড: আরাম পাচ্ছো?
ওয়াইফ: হুঁ, আরাম আছে।
হাজব্যান্ড: তাহলে দেবো?
ওয়াইফ: হ্যাঁ দাও।
হাজব্যান্ড: ভাই কতো? টাকাটা নেন।
সেলসম্যান: বিদেশি সেন্ডেল তো, দাম একটু বেশি...”
মোনা প্রথম এসএমএস থেকে বেড়িয়ে এসে
দ্বিতীয় এসএমএস ওপেন করলো আর পড়তে শুরু করলো। (মোনা মেসেজগুলোর একলাইন করে পড়ে আর এক
ব্যক্তিগত জিজ্ঞাসা ও অনুভব দিয়ে তা মেলায়। সব মানুষই হয়তো তা করে। মোনার ভেতরে
অনুভবের যে বুদবুদ তা ব্রেকেটে প্রকাশ করা হলো)
“হাট্টিমা
টিম টিম
তোমার
নাভীর নিচে শিং (এটা নিশ্চয় ছেলেদের সেই
অংগ)
তার
নিচে দুইটা ডিম (যা ভেবেছিলাম তা-ই তো!)
খাড়া
হলে বের করে
সাদা
সাদা ক্রীম (খাড়া হলেই বের করে!!)
হাট্টিমা
টিম টিম
তুমি
খাইছো সারাদিন?” (কী খাবে?)
এসএমএস গুলো পড়ে মোনা বেশ মজা পাচ্ছে। সে
হাসছে মুক টিপে টিপে। সে দ্বিতীয় এসএমএস ক্লোজ করে আরেকটা এসএমএস ওপেন করে পড়তে
লাগলো:
“বেশির ভাগ মানুষ রাতে করে, কেউ দিনেও
করে। (বিয়ের পর আমরা দিনে রাতে যখন ইচ্ছা
করতাম, আহা!) কেউ ১০ মিনিট করে (মাত্র দশ মিনিট!), কেউ আধা ঘন্টা করে (এটা ঠিক আছে, আমরাও আধা ঘন্টা ধরে করতাম)। কেউ কেউ এক দুই ঘন্টা ধরে করে (মাঝে মাঝে এক দুই ঘন্টা হয়ে যেতো)। কেউ
আবার সারা রাতভর করে (পাগল নাকি!!)।
যারা নতুন তারা নাকি দিনে রাতে কয়েকবার করে (নতুন
নতুন আমরাও করতাম)। আমাদের মজনু বললো, তুমিও নাকি...
যাই হোক, কারু পার্সোনাল ব্যপার
নিয়া...থাক। (ঠিক, পার্সোনাল ব্যপার
নিয়া কথা না বলাই ভালো)
এভাবেই মানুষ মোবাইল চার্জ করে, তাইনা? (হায় হায় এটা কী..হাহাহা...দারুণ ফান তো)
হা! হা! হা!.........”
মোনা প্রাণখুলে হাসতে লাগলো।
হাহাহা...হোহোহো...ওহহহহ....
এতোক্ষণ পাভেল কথা বলছিলো না। ভাবছিলো। সে
ভাবছিলো- যাক ভালো হলো, আমার ইনবক্সে যেসব মেসেজ আছে মোনাআপু যদি এগুলো পড়ে, তাহলে
হতে পারে এসব নিয়ে আমার সাথে কথা বলবে। টুকটাক কিছু কথা হলেও মোনাআপুর সাথে
খোলামেলা কথাগুলো বলার একটা রাস্তা তৈরি হবে। আর একবার খোলামেলা কথা বলা শুরু করতে
পারলেই, সামনে আগানো যাবে। আর আমি যা চাই...
এবার মোনার হাসি দেখে পাভেল জিজ্ঞেস করলো:
-
কী
ব্যপার, এতো হাসছো যে?
-
(পাভেলের
চোখে তাকিয়ে) হাসছি তোমার মেসেজ পড়ে।
-
কোনটা
পড়েছো?
-
এই
যে প্রথম তিনটা।
-
হ্যাঁ
ফানি মেসেজ, বাট এতো হাসির কী পেয়েছো?...এখন কোনটা পড়েছো?
-
এই
যে মোবাইল চার্জ...
-
কোনটা!?
-
আরে
এই যে, বেশির ভাগ মানুষ রাতে করে...এটা।
-
ওহ্।...
আচ্ছা মোনাআপু, শুনেছি বিয়ের পর প্রথম প্রথম মানুষ নাকি খালি ওসবই করে! তুমিও কি
করতে নাকি?
মোনা এক মূহুর্ত চুপ থাকলো, তারপর পাভেলের
চোখ থেকে চোখ সরিয়ে খোলা জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালো। বললো:
-
হুঁ।
আমরাও দিনে রাতে যখনই ইচ্ছে হতো, করতাম। যখন আশেপাশে কেউ থাকতোনা তখনই ওকে জড়িয়ে
ধরতাম। সেও আমাকে যখন তখন জড়িয়ে ধরতো। সেই সময়গুলো ছিলো সত্যিই অন্যরকম।
-
এখন
তো রাহুল ভাইয়া নেই। এখন?
-
(একটা
লম্বা শ্বাস ছেড়ে) এখন আর কী! এখন সময়গুলো
কাটতে চায়না। মাঝে মাঝে খুব দমবন্ধ লাগে।
-
রাহুল
ভাইয়া গেছে, ছয় মাস হলো, তাইনা?
-
না।
চার মাস এগারো দিন। পাভেল এই চারটা মাস আমি যে কীভাবে কাটিয়েছি তা একমাত্র আমিই
জানি। ফোনে ওকে কতোবার যে বলেছি, আমাদের এতো টাকার দরকার নেই। আমি আর পারছিনা, তুমি
চলে এসো। সে কেবল এক কথা বলেই আমাকে বুঝায়, মাত্র তো ২টা বছর, দেখতে দেখতে চলে
যাবে।...দেখতে দেখতে যাবে কি, সর সর করেও সময়গুলোকে তাড়াতে পারিনা। একেকটা দিন
যেনো একেকটা মাস। যেতেই চায়না।
-
তাহলে
তুমি তো ভীষণ কষ্টে আছো।
-
আমি
যে কী কষ্টে আছি পাভেল, এটা কিছুতেই তুমি বুঝবানা। নতুন বিয়ে হয়েছে এমন কোনো মেয়ের
স্বামী কোনোদিন যেনো বিদেশে না যায়।
-
হুঁ
ঠিক। তা তুমিও চলে যাও।
-
যেতে
পারলে কি এখনো বসে আছি! ওদেশে সাত বছরের কম সময় ধরে আছে এমন লোক গ্রীনকার্ড পায়না।
আর গ্রীনকার্ড না পেলেতো আমার যাওয়া সম্ভব না। রাহুলের পাঁচ বছর হয়েছে।
-
তার
মানে তুমি আরো অন্ততঃ দুই বছর এখানে আছো?
-
তারো
বেশি হতে পারে।
-
এর
মধ্যে ভাইয়া কি আসবেনা?
-
সবে
তো গেলো। এক বছরের আগে আসার সুযোগ নেই।
-
তাহলে
এই এক বছর তোমার কীভাবে কাটবে?
-
সেটাই
তো ভাবি সারাক্ষণ। ও বলেছে সপ্তাহখানেকের জন্য সেখানে বেড়াতে যাওয়ার নাকি সুযোগ
আছে। কোম্পানীতে সে একটা এপ্লাইও নাকি করেছে।
-
সেটা
হলেওতো তোমার একটু শান্তি হতো।
-
আমার
আর শান্তি! আমার শান্তি নেই পাভেল। আমার কেবল অশান্তি আর একাকীত্বের
যন্ত্রণা। আর হাহাকার। মাঝে মাঝে মনে হয়, কেনো যে বিদেশে থাকে এমন ছেলের সাথে
বিয়েতে রাজী হয়েছিলাম!!
-
হুঁ।
বুঝতে পারছি তোমার খুব যন্ত্রণা। তা তুমি একটু বেড়াতে টেরাতে গেলেতো পারো।
-
যেতাম
মাঝে মাঝে। ভালো লাগেনা।
-
বন্ধু
বান্ধবীদের সাথে...
-
ছেলেবন্ধু
যে দুইএকজন ছিলো তারা এখন সবাই দূরে, যার যার পোস্টিং নিয়ে, কেউ কেউ বিয়ে করে
সংসারী হয়েছে। অফিস নয়তো ব্যবসা আর সংসার নিয়ে ব্যস্ত। আর বান্ধবীদের কাছে গেলে
আমার যন্ত্রনা আরো বাড়ে।
-
কেনো!
-
যখন
একসাথে থাকি, ওরা সবাই নিজেদের দাম্পত্য জীবনের মধুর মধুর কেচ্ছা কাহিনী নিয়েই মেতে
থাকে। আর যে দু’একজনের এখনো বিয়ে হয়নি তারা তাদের প্রেম আর প্রেমিকের গপপো করতে
করতে ক্লান্ত। ওদের ওসব আলাপ শুনলে আমার অশান্তি আর যন্ত্রণা বেড়ে যায়।
-
আচ্ছা
মোনাআপু, তুমি আমার সাথে বেড়াতে যাবে? যদি যেতে চাও, যখন যেখানে তোমার ইচ্ছে নিয়ে
যাবো। যাবে?
মোনা পাভেলের দিকে তাকালো। অনেকক্ষণ পরে। কথা
বলতে বলতে সে সোফা ছেড়ে উঠে গিয়েছিলো। এতোক্ষণ সে কথা বলছিলো জানালার পাশে দাঁড়িয়ে।
পাভেলও মোনার কথা শুনতে শুনতে মোনার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো।
মোনা পাশ ফিরে পাভেলের দিকে গাঢ় চোখে তাকালো। তাকিয়ে বললো:
-
আচ্ছা
ঠিক আছে। যাবো একদিন।
-
একদিন
না। আজই চলো। এখনই। চলো গুলশান পার্ক থেকে ঘুরে আসি। তোমার ভালো লাগবে।
-
একটু
পরইতো সন্ধ্যা হয়ে যাবে।
-
হোক,
সমস্যা কী?
-
সন্ধ্যার
পর পার্কে কারা একসাথে থাকে জানো?
-
কারা
থাকে?
-
প্রেমিক
প্রেমিকা।
-
প্রেমিক
প্রেমিকা ছাড়া আর বুঝি কেউ থাকেনা?
-
না
থাকেনা। তোমার সাথে এখন পার্কে গেলে লোকে আমাদেরকেও সেটাই ভাববে।
-
লোকে
যা ইচ্ছে ভাবুক, তাতে তোমার আমার কী? চলোতো।
-
না
পাভেল আজ নয়। আরেকদিন যাবো।
-
কবে?
-
এই
ধরো কাল, কিংবা পরশু।
-
কখন?
-
(হাসতে
হাসতে) এই সময়ে। ঠিক সন্ধ্যার
সময়।
চলবে...
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন